Subscribe:
Showing posts with label দেশ ও জনপদ. Show all posts
Showing posts with label দেশ ও জনপদ. Show all posts

রাজ্জাক : জীবন থেকে নেয়া

নায়করাজ রাজ্জাক ২০১৪ সালে মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁকে নিয়ে প্রথম আলোর ক্রোড়পত্র ছুটির দিনে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওই বছরের ২৬ এপ্রিল। পড়ুন সেই প্রতিবেদনটি:
হতে চেয়েছিলেন খেলোয়াড়—তুখোড় গোলরক্ষক। কিন্তু হয়ে গেলেন অভিনেতা। একসময় উপাধি পেলেন ‘নায়করাজ’। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প যাঁদের হাত ধরে দাঁড়িয়েছে, তিনি তাঁদেরই একজন। গত শতাব্দীর ষাট-সত্তর-আশির দশকে প্রবলভাবে তিনি রুপালি পর্দায় উপস্থিত। এরপর অংশগ্রহণ কমলেও এখনো প্রবলভাবেই চলচ্চিত্রের মানুষ তিনি। এবার মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পেলেন রাজ্জাক। সাধারণ্যে এখনো তিনি নায়করাজ রাজ্জাক নামেই পরিচিত।

 ছবি বিশ্বাসের শিষ্য:
‘সিনেমায় এলেন কী করে?’ এটাই ছিল আমাদের প্রথম প্রশ্ন।
‘সিনেমায় আসব, এ রকম কোনো পরিকল্পনাই ছিল না শৈশবে। আমরা থাকতাম কলকাতায় নাকতলায়, পড়তাম খানপুর হাইস্কুলে। ছবি বিশ্বাস, কানন দেবী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়রা থাকতেন আমাদের পাড়ায়। স্কুলে ফুটবলের নেশা পেয়ে বসেছিল। ছিলাম গোলরক্ষক। ভালো খেলতাম। আমাদের স্কুলে দুটো শিফট ছিল। সকালের শিফটে পড়ত মেয়েরা, পরের শিফটে ছেলেরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো স্কুলে। আমরা আবৃত্তি করতাম। ছবি বিশ্বাস বিপুল উৎসাহ নিয়ে আমাদের আবৃত্তি শেখাতেন।’
একালের পাঠকদের জন্য ছবি বিশ্বাস সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য: কলকাতার নাটক ও চলচ্চিত্র জগতে ছবি বিশ্বাস একসময় দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। সত্যজিৎ রায়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা ও জলসাঘর ছবি দুটো দেখলেই কোন মাপের অভিনেতা ছিলেন তিনি, সেটা বিলক্ষণ বোঝা যাবে। সেই ছবি বিশ্বাস পাড়ার ছেলে কিশোর রাজ্জাককেও আবৃত্তি শেখাতেন।

খেলার মাঠ থেকে মঞ্চে:
আবৃত্তি, গান তো ছিলই। কিন্তু স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এতদিন মেয়েরাই অভিনয় করত। শিক্ষক রথীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ঠিক করলেন, ছেলেদের দিয়ে নাটক করাবেন। জোগাড় করা হলো নারী চরিত্রবর্জিত নাটক বিদ্রোহী। এবার প্রশ্ন: ‘হিরো’ হবে কে? রাজ্জাক তখন দারুণ এক ফুটবল ম্যাচে গোলপোস্ট সামলাচ্ছেন। রথীন্দ্রনাথ বললেন, ‘ওকে ধরে নিয়ে আয়!’
খেলার মাঠ থেকে ‘গ্রেপ্তার’ হলেন রাজ্জাক। করলেন অভিনয়। পরদিন স্কুলের কয়েকটা মেয়েও বলল, ‘তুই তো ভালো অভিনয় করিস!’
মেয়েদের প্রশংসা একটি কিশোরকে তো আপ্লুত করতেই পারে! ফলে অভিনয়ে মনোযোগী হলেন তিনি। পাড়ার শক্তিসংঘ ক্লাবে তখন নাটকের চর্চা হতো। শক্তিমান স্ক্রিপ্ট রাইটার জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী ছিলেন এই ক্লাবের নাটের গুরু। তিনি নতুন ইহুদি নামে একটি নাটক লিখলেন। পূর্ব বাংলা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে যারা পশ্চিম বাংলায় এসেছিল, তাদেরই একটি পরিবারকে নিয়ে কাহিনি। পুরো সংসারের হাল ধরে একটি কিশোর ছেলে। হকারি করে, ঠোঙা বিক্রি করে, পত্রিকা বিক্রি করে। এই চরিত্রে অভিনয় করার জন্য ডাক পড়ল রাজ্জাকের। জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী বললেন, ‘তুই আয়।’
এ নাটকটিতেও রাজ্জাক দারুণ অভিনয় করলেন। একটু একটু করে নাটকের নেশায় পেয়ে বসল তাঁকে। আশপাশের পাড়াগুলোতেও কিশোর নায়ক চরিত্রে অভিনয় করতে থাকলেন দাপটের সঙ্গে। খেলোয়াড় হওয়ার শখ ধীরে ধীরে নির্বাসিত হলো। অভিনেতা রাজ্জাক মূর্ত হয়ে উঠল।

সপরিবারে রাজ্জাক

তরুণতীর্থ:
তরুণতীর্থ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সভাপতি ছিলেন ছবি বিশ্বাস। পীযূষ বোস ছিলেন নাট্যপরিচালক। এখানে নিয়মিত অভিনয় শুরু করলেন রাজ্জাক। অভিনয় করতে করতেই কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে। পরিবারের কেউ মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাই কেউই তাঁর নেশাকে স্বীকৃতি দেননি। কেবল একজনই—মেজদা আবদুল গফুর—বলেছেন, ‘আমি আছি তোর পাশে, চালিয়ে যা!’
‘মুশকিল হলো, আমাকে নিয়ে চিন্তিত পরিবারের লোকজন আমাকে এ সময় বিয়ে করতে বাধ্য করলেন। তাঁদের ধারণা ছিল, অভিনয় করতে গিয়ে আমি বুঝি দুনিয়ার মেয়েদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াই। তাঁরা শর্ত দিলেন, নাটক করতে চাও করো, কিন্তু বিয়ে করতে হবে। অগত্যা, ১৯৬২ সালে আমি বিয়ে করলাম।’ লক্ষ্মী নামের মেয়েটি রাজ্জাকের সংসারে এল লক্ষ্মী হয়েই।

স্ত্রী মোসাম্মাত খায়রুন্নেসা লক্ষ্মীর সঙ্গে

কলকাতা থেকে ঢাকা:
‘১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর ঠিক করলাম বম্বে চলে যাব। কিন্তু ওস্তাদ পীযূষ বোস বললেন, ক্যারিয়ার গড়তে হলে পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাও। কলকাতায় আমাদের পরিবারের ব্যবসা ছিল, কারখানা ছিল। সচ্ছল ছিলাম আমরা। আমি খুব জেদি ছিলাম। ঠিক করেছিলাম, একেবারে মাইগ্রেশন করেই ঢাকায় চলে আসব। সেই ভাবনা থেকেই কিছু টাকা-পয়সা নিয়ে চলে এলাম ঢাকায়। বাপ্পা তখন আট মাসের শিশু। ঢাকার কমলাপুরে ছোট্ট একটা বাড়ি ভাড়া করলাম। রোজগার বলতে কিছু নেই। টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। এবার শুরু হলো সত্যিকারের জীবনসংগ্রাম।
‘টেলিভিশনে সংবাদপাঠক হিসেবে অডিশন দিলাম। পাস করলাম। কিন্তু অভিনেত্রী রেশমার স্বামী জামান আলী খান বললেন, “স্টপ। তুমি অভিনেতা মানুষ। তুমি কেন খবর পড়বে?” তিনি ডিআইটিতে নিয়ে গেলেন। তখন একটি ধারাবাহিক নাটক হতো ঘরোয়া নামে। আনোয়ারা বেগম, শিমূল বিল্লাহ (এখন ইউসুফ), লালু ভাই অভিনয় করতেন। আমিও সে নাটকের লোক হয়ে গেলাম। কিন্তু সংসার তো চলে না।’

জীবন থেকে নেয়া ছবিতে সুচন্দার সঙ্গে

সংগ্রাম:
ততদিনে ফার্মগেটে একটা বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন রাজ্জাক। হেঁটে হেঁটে ফার্মগেট থেকে ডিআইটি টেলিভিশন ভবনে যান। আট আনা, এক টাকা বাঁচে, সেটাই অনেক।
অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম, রাজ্জাকের গলায় কথা আটকে যাচ্ছে। চোখে পানি। বললেন, ‘জানেন, তখন পাঁচ টাকায় এক কৌটা ড্যানো দুধ পাওয়া যেত। আমি খুব জেদি। পরিবারের কাছ থেকে আর কোনো দিন টাকা চাইনি। কিন্তু তখন টিকে থাকা ছিল খুব কঠিন। কিন্তু লক্ষ্মী ছিল পাহাড়ের মতো অটল। ও বলেছিল, চেষ্টা করো। ওর কারণেই রয়ে গেলাম। যুদ্ধ ঘোষণা করলাম, আমাকে কিছু একটা করতেই হবে।’
কাজী জহির, মুস্তাফিজ, সুভাষ দত্তদের কাছে যান রাজ্জাক। অনুরোধ করেন, ‘একটা চরিত্র যদি দেন আমাকে!’ সবাই শোনেন। রাজ্জাক বলেন, ‘নাটকের ওপর কাজ করেছি। বম্বের শশধর মুখার্জির ফিল্মালয় থেকে নয় মাসের কোর্সও করেছি। ছোটখাটো একটা পার্ট যদি দেন! হিরো হতে চাই না। চাই যেকোনো একটি চরিত্র!’ কার বউ, ১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন ইত্যাদি সিনেমায় মিলতে থাকে ছোটখাটো কাজ। কিন্তু সেটা টিকে থাকার মতো যথেষ্ট কিছু নয়।

রংবাজ ছবিতে কবরীর সঙ্গে

জহিরের ডাক
জহির রায়হানের সঙ্গে যোগাযোগ হতেই জহির বলেন, ‘আপনি তো এখানকার মানুষ নন। কোত্থেকে এসেছেন?’
রাজ্জাক বলেন, ‘কলকাতার।’
ঝটপট জহির বলেন, রোববার সকালে ঘুম থেকে উঠে সোজা আমার কায়েতটুলির বাড়িতে চলে আসবেন। চুল-টুল আঁচড়াবেন না। ঘুম থেকে উঠে সোজা—বুঝেছেন?’
রাজ্জাক রোমাঞ্চিত হন। কথামতো কায়েতটুলিতে যাওয়ার পর খুশি হন জহির। বলেন, ‘আমি আপনাকে নায়কের পার্ট দেব।’
রাজ্জাক আকাশ থেকে পড়েন। আস্তে আস্তে জানতে পারেন, জহিরের নিজের লেখা উপন্যাস হাজার বছর ধরে থেকে ছবি বানাচ্ছেন তিনি। সেখানে মূল চরিত্রটি তিনি রাজ্জাককে দিতে চান। কিন্তু সে সময়ই জহিরেরও কী সব ঝামেলা হলো। ছবিটি আর করা হলো না। দিশেহারা হয়ে পড়লেন রাজ্জাক।
কেটে গেল বেশ কিছু দিন। এর মধ্যে একদিন মোহাম্মদ জাকারিয়ার সঙ্গে দেখা। সেই জাকারিয়া, যিনি শম্ভু মিত্রের বহুরূপীর সদস্য ছিলেন। বললেন, ‘জহির রায়হান আপনাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে।’
জহির রাজ্জাককে দেখেই বলে উঠলেন, ‘আপনার বাড়ি চিনি না। কেউ ঠিকানা দিতে পারছে না! আর আপনাকে আমি হিরো করে রেখেছি!’ তখনই সাইনিং মানি বাবদ পেলেন ৫০০ টাকা। সেখানেই মিষ্টিমুখ করালেন ইউনিটের সবাইকে। বাকি টাকা লক্ষ্মীর হাতে তুলে দিয়ে বললেন, ‘আমি জহির রায়হানের ছবিতে “হিরো” হয়েছি।’
ছবিটির নাম ছিল বেহুলা। পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছিলেন ছবিটি করে। এরপর আগুন নিয়ে খেলা করার সময় তিনি নিলেন সাত হাজার টাকা। এটা সেই সময়ের কথা বলা হচ্ছে, যখন একটি বড় মোরগ পাওয়া যেত দেড় টাকায়!

উর্দু না বাংলা/জীবন থেকে নেয়া:
ষাটের দশকটা ছিল বাঙালি জাতীয়তাবোধে জাগ্রত হওয়ার দশক। চলচ্চিত্র থেকেও উর্দুর দাপট কাটিয়ে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার দশক। রাজ্জাক ছিলেন সে আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ সৈনিক। বেহুলা থেকেই রাজ্জাককে চিনে নিল দর্শক। বাংলা ছবিও যে দর্শককে টেনে নিয়ে যেতে পারে সিনেমা হলে। তা প্রমাণিত হলো। প্রস্তাব পেলেও রাজ্জাক কখনো উর্দু ছবিতে অভিনয় করেননি। এরপর আগুন নিয়ে খেলা, আবির্ভাব, এতটুকু আশা, কাচ কাটা হীরা, অশ্রু দিয়ে লেখা দিয়ে পৌঁছুলেন জীবন থেকে নেয়া ছবির কাছে। ততদিনে রাজ্জাক এক নম্বর তারকা।
জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া ছবিটি ঘিরে অনেক স্মৃতি রাজ্জাকের। জহির রায়হান যে রাজ্জাকের মন কতটা ছুঁয়ে আছেন, তা বোঝা গেল তাঁর চোখের জলে। বহুবার সিনেমায় চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে কাঁদতে হয়েছে, কিন্তু এই চোখের জলে অভিনয় নেই। বুক থেকে বেরিয়ে আসা কান্না।

‘আমার কাছে মনে হয়, জীবন থেকে নেয়া ছবিটি স্বাধীনতার পূর্বঘোষণা। আমরা এফডিসির ৩ নম্বর ফ্লোরে কাজ শুরু করলাম। হঠাৎ আর্মি এসে ঘিরে ফেলল ফ্লোরটা। বলল, “ডিরেক্টর কে?” জহির ভাই বললেন, “আমি।” “অ্যাক্টর?” বললাম, “আমি।” আমাকে মূল অভিনেতা হিসেবে ভাবতেই পারছিল না ওরা। এবার আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো ক্যান্টনমেন্টে। সেখানে তিন ঘণ্টা ধরে জহির ভাইয়ের সঙ্গে তর্ক চলল ওদের। জহির ভাই বলছিলেন, “আমাকে ধরে এনেছেন কোন আইনে? ছবি হলো কি হলো না, সেটা তো সেন্সর বোর্ড দেখবে।” অনেক তর্কের পর আমরা যুদ্ধ জয় করে ফিরে এলাম। শুটিং করেছিলাম প্রভাতফেরিতে। একটি মিছিলে ঢুকেই কাজটি করতে হয়েছিল। সে এক অদ্ভুত ঘটনা। এরপর জীবন থেকে নেয়া তো ইতিহাসই হয়ে গেল।

অনন্ত প্রেম ছবিতে ববিতার সঙ্গে

স্বাধীনতার পর:
স্বাধীনতার পর ওরা ১১ জন, অবুঝ মন, রংবাজ করেছেন। এরপর আলোর মিছিল ছবিটি ছিল ব্যতিক্রমী। বাদী থেকে বেগম, মায়ার বাঁধন হয়ে তিনি পাড়ি দিলেন অনেকটা পথ—একেবারে অনন্ত প্রেম পর্যন্ত। এই ছবিটি পরিচালনাও করলেন রাজ্জাক। অগ্নিশিখা, অশিক্ষিত, ছুটির ঘণ্টা...ছবির পর ছবি করে যেতে লাগলেন। মাঝে মাঝে পরিচালনাও করলেন। বাবা কেন চাকর, মরণ নিয়ে খেলা তাঁর পরিচালনায় আরো দুটি ছবির নাম। রাজ্জাক-নির্মিত ছবিগুলো ছিল সুস্থধারার। চলচ্চিত্র জগতে যখন অপসংস্কৃতি ধীরে ধীরে বাসা বাঁধতে শুরু করল, তখনো রাজ্জাক নিরলসভাবে সুরুচিসম্পন্ন ভালো বাণিজ্যিক ছবি করে যেতে থাকলেন। এরই মধ্যে সুচন্দা, কবরী, শাবানা, ববিতা, রোজিনার সঙ্গে একের পর এক সফল জুটি উপহার দিয়ে গেলেন।

কৃতজ্ঞতা:
দীর্ঘ চলচ্চিত্রজীবনে সহশিল্পীদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা, সহযোগিতা পেয়েছেন, তা ভুলতে পারেন না রাজ্জাক। সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞতা জানালেন দর্শকদের। বললেন, ‘এ দেশের মানুষ নির্দ্বিধায়, নিঃশঙ্কচিত্তে আমাকে বছরের পর বছর ধরে যে ভালোবাসা দিয়ে গেছেন, তা আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমার মতো একজন সাধারণ নায়ককে তাঁরা “নায়করাজ” বানিয়েছেন। তাঁদের প্রতি সম্মান রেখেই আমি কাজ করি। আমি ভাগ্যবান শিল্পী। ভাগ্যবান নায়ক। পাঁচটি প্রজন্মকে ৭২ বছরের জীবনে বিনোদন দিয়ে আসতে পারছি। মাঝে মাঝে নিজেকে তৃপ্ত মনে হয়। ৫০টা বছর একটা দেশের মানুষের মনের মণিকোঠায় থাকা সহজ কথা নয়। তালি আর ফুল বড় বিপজ্জনক জিনিস!’
১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া এই শিল্পীর বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।

দুঃখ:
‘তৃপ্ত’ রাজ্জাক যে সব বিষয়েই তৃপ্ত, তা নয়। বললেন, ‘কী ইন্ডাস্ট্রি বানিয়েছিলাম আমরা, আর কী হয়ে গেল সেটা! কেন যেন মনে হয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কমে গেছে আমাদের। এটা একেবারেই ভালো লাগে না। আমি চাই, বাংলাদেশের বাংলা চলচ্চিত্র আবার একটা উচ্চতায় পৌঁছাবে।’

রাজ্জাক একটি সুস্থধারার উন্নত রুচির চলচ্চিত্রশিল্পের স্বপ্ন দেখেন। এবং দেখতেই থাকেন।

একনজরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার:
* কি যে করি (১৯৭৬)
* অশিক্ষিত (১৯৭৮)
* বড় ভালো লোক ছিল (১৯৮২)
* চন্দ্রনাথ (১৯৮৪)
* যোগাযোগ (১৯৮৮)
* আজীবন সম্মাননা ২০১৩
মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা ২০১৪
 
সুত্র :প্রথম আলো

বাবার জন্য আপনারা দোয়া করেন: সম্রাট


কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাকের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন ছেলে খালিদ হোসেইন সম্রাট। সোমবার সন্ধ্যায় বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আপনারা বাবার জন্য দোয়া করবেন। এখন দোয়া ছাড়া কিছু করার নেই। ভাই (বাপ্পারাজ) দেশের বাইরে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে দাফন ও অন্যান্য বিষয়ে রাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী নায়করাজ রাজ্জাক ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

সুত্র :প্রথম আলো

নায়করাজ রাজ্জাক আর নেই!!


চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী নায়করাজ রাজ্জাক আর নেই। আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতাল সূত্র জানায়, সোমবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে হার্ট অ্যাটাক হওয়া অবস্থায় নায়ক রাজ্জাককে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব ধরনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ৬টা ১৩ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মৃত্যুকালে নায়করাজ স্ত্রী, সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ২০১৪ সালে মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পাওয়া এ অভিনেতার মৃত্যুসংবাদ শুনে তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে হাসপাতালে ছুটে গেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা।

১৯৬৬ সালে ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ঢাকাই ছবিতে দর্শকনন্দিত হন কিংবদন্তি এ অভিনেতা।

নায়করাজ রাজ্জাক প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ‘কি যে করি’ ছবিতে অভিনয় করে। পাঁচবার তিনি জাতীয় সম্মাননা পান। ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার পেয়েছেন অসংখ্যবার।

বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্রে খুব কমই অভিনয় করছেন নায়করাজ রাজ্জাক। শুধু নায়ক হিসেবেই নয়, পরিচালক হিসেবেও বেশ সফল। ‘আয়না কাহিনী’ ছবিটি নির্মাণ করেন রাজ্জাক। নায়ক হিসেবে নায়করাজ প্রথম অভিনয় করেন জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ ছবিতে। এতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন সুচন্দা।

‘অবুঝ মন’, ‘আলোর মিছিল’ ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘রংবাজ’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘জীবন থেকে নেওয়া’ ‘পিচঢালা পথ’, ‘অশিক্ষিত’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’সহ অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করা রাজ্জাক সর্বশেষ অভিনয় করেছেন ছেলে বাপ্পারাজ পরিচালিত ‘কার্তুজ’ ছবিতে।

ষাটের দশকের মাঝের দিকে রাজ্জাক চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সত্তরের দশকেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের প্রধান অভিনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তিনি একাধারে অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক হিসেবে সুনাম অর্জন করেন।

চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ ডাকলে তাতে সাড়া দিতেন ‘বেহুলা’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘এতটুকু আশা’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘অবুঝ মন’-এ অভিনয় করা রাজ্জাক। আমৃত্যু এই শিল্পের সঙ্গেই থাকতে চাওয়ার কথা জানিয়ে একসময় বলছিলেন, ‘আমি রাজ্জাক হয়তো অন্য কোনো চাকরি করতাম অথবা ঘুরে বেড়াতাম। কিন্তু ছোটবেলার অভিনয় প্রচেষ্টাকে আমি হারাতে দিইনি। আমি নাটক থেকে চলচ্চিত্রে এসেছি। সবাই আমাকে চিনেছে। পেয়েছি সাফল্যও। বাংলার মানুষজন আমাকে একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবেই দেখেন ও আমাকে ভালোবাসেন। আজকে আমার যা কিছু হয়েছে, সবই এই চলচ্চিত্রশিল্পের কল্যাণে।

রাজ্জাক এ-ও বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের ছোট একটি দেশ হতে পারে, তারপরও এই দেশের একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। যাঁদের জন্য আমি রাজ্জাক হয়েছি, আমি সব সময় তাঁদের কাছাকাছি থাকতে চাই।

১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তি নায়ক রাজ্জাক। সেখানেই ছোটবেলা কাটে। মঞ্চনাটকে অভিনয়ের হাতে খড়িও সেখানে।

নায়করাজের দুই ছেলে বাপ্পারাজ ও সম্রাটও চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী।

রাষ্ট্রপতির শোক:
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকপ্রিয়তা অর্জনে নায়করাজ রাজ্জাকের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বাঙালি সংস্কৃতি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম স্মরণ করবে।
রাষ্ট্রপতি রাজ্জাকের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রীর শোক:
ঢাকাই ছবির কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে রাজ্জাকের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুতে দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র।’

শেখ হাসিনা নায়করাজের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

সুত্র :প্রথম আলো

প্রধানমন্ত্রী হলে সাত দিনেই দেশ ঠিক করে ফেলব : হিরো আলম


প্রধানমন্ত্রী হতে পারলে সাত দিনেই দেশ ঠিক করে ফেলবেন বলে জানিয়েছেন বগুড়ার হিরো আলম। শুক্রবার দুপুরে একটি রেডিও চ্যানেলের লাইভে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন। রেডিও জকি জানতে চান, মন্ত্রী হলে আপনি কী করবেন?
উত্তরে হিরো আলম বলেন, ‘তিনি মন্ত্রী হতে চান না। তবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেলে তিনি সাত দিনেই দেশ ঠিক করে ছাড়বেন। ‘ এসময় হিরো আলম ভারতীয় অভিনেতার মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত ‘ফাটাকেষ্ট’ ছবির কথা
উল্লেখ করেন। বলেন, আপনি ‘ফাটাকেষ্ট দেখেননি? ছবিতে যেভাবে দেখানো হয়েছে সেভাবেই দেশ ঠিক করে ফেলবো।
রেডিও জকি হিরো আলমকে নেচে দেখাতে বলেন। উত্তরে হিরো আলম বলেন, ‘তিনি নাচতে আগ্রহী নন। তবে সুযোগ পেলে বলিউড অভিনেত্রী সানি লিওনের সঙ্গে নেচে দেখাবেন তিনি। ‘
মানুষের খারাপ মন্তব্য, সমালোচনা কীভাবে নেন জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ‘এগুলো আমার খুব ভালো লাগে। কারণ গালি দিতে হলে আমার নামটা আগে মুখে নিতে হয়। তার মানে ওই ব্যক্তির মাথায় ‘হিরো আলম’ শব্দটা কাজ করে। সে আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলেই এটা করে। ‘
‘মার ছক্কা’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় হিরো আলমের অভিষেক হচ্ছে। ছবিতে প্রচুর অ্যাকশন দৃশ্য আছে বলে জানান হিরো আলম। রেডিও জকি প্রশ্ন করেন, ‘এমন ছিপছিপে শরীর দিয়ে কীভাবে অ্যাকশন দৃশ্য অভিনয় করেছেন? এটা কীভাবে সম্ভব?’ হিরো আলম বলেন, ‘পারি আর না পারি সামনে আগাইয়া যাব। পরে যা হওয়ার হয়ে যাবে।’
কে এই হিরো আলম?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে চর্চিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো হিরো আলম। ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে আলমের ভিডিও ও ছবি। কিন্তু কে এই হিরো আলম?
সিডি বিক্রি করতেন আশরাফুল আলম। সেটা বেশ আগের ঘটনা। সিডি যখন চলছিল না তখনই মাথায় আসে ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসার। ভাবলেন নিজ গ্রামেই সেটা করবেন, এবং করে ফেললেন। বগুড়ার এরুলিয়া ইউনিয়নের এরুলিয়া গ্রামেই শুরু হয় আলমের ডিশ ব্যবসা।
ছোটবেলা থেকেই অভাব-অনটনের সাথে চলা আলমের পরিবার তাকে আরেক পরিবারের হাতে তুলে দেয়। আলম চলে আসেন একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের বাসায়। আব্দুর রাজ্জাক তাকে ছেলের মতো করেই বড় করে তোলেন। স্নেহ করতেন।
কিন্তু গ্রামে অভাব তো প্রায় মানুষের আছে। আলমের পালক পিতা আব্দুর রাজ্জাকের সংসারও অভাবের ছোঁয়া পায়। স্থানীয় স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আলমকে নেমে পড়তে হলো জীবিকা নির্বাহের তাগিদে। সিডি বিক্রি থেকে আলম ডিশ ব্যবসায় হাত দিয়ে সফলতা অর্জন করেন। তার মাসে আয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখেই আছেন আলম।

কালের কণ্ঠকে আলম বলেন, ”আমি আমার গ্রামের সবার ভালোবাসা পেয়েছি। এই ভালোবাসা আমাকে নিজের হাতে করে খেয়ে বাঁচতে শিখিয়েছে। এখন আমার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আল্লাহর রহমতে সুখেই আছি। ”
সিডির ব্যবসা করতেন আলম। ক্যাসেটে দেখতেন মডেলদের ছবি। সেই থেকে মাথায় ঢোকে মডেল হওয়ার। ২০০৮ সালেই করে ফেলেন একটা গানের সাথে মডেলিং। সেটাই ছিল শুরু। এরপরে সেসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সংসারে মনোযোগী হন। ২০০৯ সালে বিয়ে করেন পাশের গ্রামের সুমী নামের এক তরুণীকে। আলম সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও সুমী পড়েছেন এসএসসি পর্যন্ত। তাদের সংসারে আসে নতুন দুই অতিথি। নিজের নামের সাথে মিলিয়ে রাখেন সন্তানদের নাম। পুত্র আবির ও কন্যা আলো। এখন সংসার আর ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত আলম। পাশাপাশি নিজে কিছু মিউজিক ভিডিও করেন। সেগুলো নিজের ক্যাবল চ্যানেলেই প্রচার করেন। গ্রামের মানুষরাও তাকে বাহবা দেয়। আলম উৎসাহ পান।
আলম বলেন, আমার মডেল হওয়ার ইচ্ছে ছিল আগে। যখন সিডি বিক্রি করতাম। আমি জানি না এসব ইচ্ছে পূরণ হয় কি না, তবে লেগে ছিলাম। হয়েছে। অনেকে বলে বাজে হয়েছে আমি কান দেই না। অনেকে আবার বলে ভালোই হয়েছে। আমি গ্রামের ছেলে মন যা চায় করি। মানুষের কথায় কান দেওয়ার ইচ্ছে নেই।
বগুড়া সদরের এরুলিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক আলম সম্পর্কে কালের কণ্ঠকে বলেন, ”আলম ছেলে খারাপ না। কষ্ট করে বড় হয়েছে আলম। সে গান গাইতে পারে না, নাচতেও পারে না। তবে তার মডেলিং এর শখ আছে এটা জানি। ”
এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ”আলম সম্পর্কে জানি সে ডিশ ব্যবসা করে। নির্বাচনও করে। দুইবার দাঁড়িয়েছিল। হেরে গেছে। তবে এলাকার মানুষজন তাকে পছন্দ করে। নির্বাচনে এবার সে দ্বিতীয় হয়েছে। ছেলে হিসেবে খারাপ না, তবে শুনছি মডেলিং-এর দিকে তার ঝোঁক। ”
আশরাফুল আলম কালের কণ্ঠকে নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, ”আমি এবার মাত্র ৭০ ভোটে হেরেছি। এর আগেরবারও হেরেছি অল্প ভোটে। তবে এলাকার মানুষের ভালোবাসার জন্য আমি আরেকবার নির্বাচন করবো। আমি বলেছিলাম আর দাঁড়াবো না, কিন্তু ভালোবাসার জন্য পরেরবার আরেকবার দাঁড়াবো। ”
মডেলিং সম্পর্কে আলম বলেন, ”আমার ভিডিওগুলো ফেসবুক, ইউটিউবে ছড়িয়ে যাওয়ায় এখন অনেকেই আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে দুটি মিউজিক ভিডিও করার জন্য রাজি হয়েছি। আজ রাতে ঢাকা যাচ্ছি। ” কার সাথে, কিসের মিউজিক ভিডিও এমন প্রশ্নের জবাবে আলম জানান, ‘কুসুম কুসুম প্রেম’ ছবির সজলের সাথে কাজ করার কথা। ”সজল ভাই আমাদের বগুড়ার ছেলে। ”
হিরো আলম কি সুপারস্টার? 
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে হিরো আলমকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে দেওয়া হ্যাশট্যাগসংবলিত কয়েকটি টুইট ও স্ট্যাটাস
বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছেন ‘হিরো আলম’। এবার শুধু দেশেই নয়, পাশের দেশ ভারতেও তাঁকে নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ভারতীয়রা হিরো আলমকে বাংলাদেশের ‘সুপারস্টার’-এর তকমা দিয়ে দিয়েছেন। এমনকি এই তকমার ভিত্তিতে ভারতীয় কিছু সংবাদমাধ্যমও তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন করতে শুরু করেছে।
দেশের বাইরে হিরো আলমের নাম ছড়িয়ে পড়ে যখন তিনি ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ছবি তোলেন এবং এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি পত্রিকা। সেই ছবি ও প্রতিবেদনের জের ধরে ১৬ ডিসেম্বর বিবিসি হিন্দি প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিরো আলমকে নিয়ে। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি একে একে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদমাধ্যমগুলোতেও তিনি খবরের শিরোনাম হন। জি নিউজ, এনডিটিভি, ডেইলি ভাস্কর, মিড-ডের মতো প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলো তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন করে। সেখানে অনেকেই হিরো আলমকে বাংলাদেশের বিনোদনজগতের অন্যতম তারকা বলে অভিহিত করেন। তাঁরা বলেন, এ পর্যন্ত ৫০০ মিউজিক ভিডিও এবং র‍্যাপ গান তৈরি করেছেন হিরো আলম। তাঁর ফেসবুকের অনুসারীর সংখ্যার ওপর ভিত্তি করেও ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো তাঁকে তারকা বলে ধরে নিয়েছে। এ জন্যই মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে গুগলে হিরো আলমকে সালমান খানের চেয়ে বেশিবার খোঁজা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে হিরো আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমিও শুনেছি। এ জন্যই বিদেশ থেকে ভক্তদের ফোন আসছে অনেক।’
তবে এ ধরনের প্রচারের কারণে বাংলাদেশের শিল্পীদের ব্যাপারে যে নেতিবাচক বার্তা ভারতে যাচ্ছে, তা নিয়েও হচ্ছে সমালোচনা। টুইটার ও ফেসবুকে ‘হিরো আলম’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে অনেকেই শেয়ার করছেন নানা ধরনের আপত্তিকর কৌতুক। এর সঙ্গে অনেকে আবার হ্যাশট্যাগ দিয়ে ‘বাংলাদেশ’ ও ‘বাংলাদেশি অ্যাক্টর’ প্রসঙ্গটিও জুড়ে দিচ্ছেন। হিরো আলমের সঙ্গে ভারতীয়দের কৌতুকের সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও দেশের শিল্পীদের ভাবমূর্তিও। ইউটিউবে প্রকাশিত হিরো আলমের মিউজিক ভিডিওতে তাঁর ব্যক্তিত্ব, অভিব্যক্তি ও বাচনভঙ্গি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় বিভিন্ন পেজ ও গণমাধ্যম রসিকতা করছে। গুটি কয়েক গণমাধ্যম হিরো আলমকে ‘সামাজিক মাধ্যমের তারকা’ বলে আখ্যায়িত করছে বটে, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তাঁকে বাংলাদেশের বিনোদনজগতের তারকার কাতারেই ফেলছে এবং গুগলে তাঁকে খুঁজেই যাচ্ছে।এই খোঁজাখুঁজিতে হিরো আলম হয়তো বহুদূর যেতে পারবেন, কিন্তু এতে বাংলাদেশের শিল্পীদের ভাবমূর্তি বাইরের দেশে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আলোচিত হয়ে উঠতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ব্যক্তিত্ব। সেই শঙ্কার কথাই জানালেন গণমাধ্যম বিশ্লেষক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর। তিনি বললেন, ‘এগুলো হচ্ছে ভারতে আমাদের চ্যানেল দেখা না যাওয়ার প্রভাব এবং আমাদের সিনেমা সেখানে নিয়মিত প্রদর্শিত না হওয়ার প্রভাব। যেকোনো লোক যেকোনো কিছু ক্লেইম করতে পারে। সমস্যাটির সমাধান হতে পারে ওই দেশে আমাদের টিভি অনুষ্ঠান-সিনেমা নিয়মিত প্রদর্শিত হলে। নইলে এ রকম বহু হিরো আলম বের হবে ভবিষ্যতে।’
উল্লেখ্য, বগুড়া জেলায় স্থানীয় কেব্‌ল সংযোগ স্থাপনের ব্যবসা রয়েছে আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের। সেই সুবাদেই তিনি নিজের স্থানীয় সংযোগগুলো প্রচারের জন্য কিছু মিউজিক ভিডিও তৈরি করেছিলেন বিভিন্ন সময়। যা এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ে। দেশজুড়ে হিরো আলমের ভিডিও নিয়ে কৌতুক শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় তাঁর ভিডিও নিয়ে হয় ট্রল ও মিম। কিন্তু এখন দেশের বাইরেও বাংলাদেশের শিল্পীদের প্রতিনিধি হিসেবে হিরো আলমের নাম ছড়িয়ে পড়ায় সেই কৌতুক শঙ্কায় পরিণত হচ্ছে।

‘স্মার্ট’ রিকশা চালকের আয়ও বেশি


ইস্ত্রি করা শার্টের সঙ্গে মিলিয়ে প্যান্ট, গলায় টাই, সানগ্লাসে ঢাকা চোখ, মাথায় ক্যাপ, হাতে ঘড়ি, আঙ্গুলে সোনার আংটি (রিং), পায়ে চকচকে জুতা (সু), আছে মোবাইলও।
এভাবেই রুচিশীল পোশাক-পরিচ্ছদে পরিপাটি হয়ে লক্ষ্মীপুর শহরে রিকশা চালান মো. ফারুক (৩০)। প্রতিদিন স্মার্ট হয়ে শহরের অলি-গলিতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
স্থানীয়দের কাছেও তিনি তাই ‘স্মার্ট’ রিকশা চালক। তার রুচিশীল এসব পোশাক-আশাক ছাড়াও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার চেষ্টা, বুদ্ধিমত্তা ও সুন্দর আচরণে মুগ্ধ সবাই।
ফারুক লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাঞ্ছানগর এলাকার মো. শাহজাহানের ছেলে। মা-বাবা, স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে তার সংসার। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। পরে বেশ কিছুদিন সামান্য বেতনে চাকরি করেন।
চাকরি ছেড়ে গত এক বছর ধরে লক্ষ্মীপুর শহরসহ আশেপাশের এলাকায় রিকশা চালাচ্ছেন ফারুক। স্মার্টনেসের পাশাপাশি দক্ষ চালক হওয়ায় শহরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণও করতে পেরেছেন দ্রুতই।
ফারুক বাংলানিউজকে জানান, যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণেই ব্যতিক্রমী এ সাজে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। ‘স্মার্ট’ হয়ে কাঙ্খিত প্রত্যাশা পূরণও হচ্ছে। ২০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকাও পেয়েছেন।
ফারুককে নিয়ে কৌতুহলও কম নয়। অনেকেই সেলফি তোলেন, কেউ কেউ শখ করে তার রিকশায় উঠে শহরে ঘোরেন, চায়ের আড্ডাও করেন।
তার ব্যাটারি চালিত এ রিকশায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ওঠেন। সময় করে স্ত্রী-সন্তানকে রিকশায় নিয়ে বেড়াতে বের হন ফারুক নিজেও।
ফারুক জানান, তার ৭/৮টি প্যান্ট, সমান সংখ্যক শার্ট, তিন জোড়া জুতা, তিনটি টাই ও শীতের জন্য দু’টি ব্লেজার আছে। এসব নিজের পছন্দে উপার্জিত টাকায় কেনা।
কলেজ ছাত্র শাকিল ও জামাল বলেন, ‘স্মার্ট ওই রিকশা চালককে দেখতে বেশ ভালো লাগে। তিনি কাউকে বাড়তি ভাড়ার জন্য চাপ দেন না। তবে বেশিরভাগ যাত্রী নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা দেন’।
ফারুক বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা বেশি বিক্রির আশায় তাদের দোকানকে ভালো সাজ-সজ্জায় নানাভাবে সাজান। আমিও তেমনি স্মার্ট হয়ে রিকশা চালিয়ে যাত্রী আকর্ষণের চেষ্টা করছি। পরিপাটি হয়ে চলতে নিজের কাছেও ভালো লাগে। এতে দু’দিকেই লাভ- যাত্রী ও ভাড়া বেশি মেলে, শরীর-মনও ভালো থাকে’।

কোরবানি না করে ১ লক্ষ টাকা বন্যাদুর্গতের সহায়তায় দিবেন সানী-মৌসুমী


দেশের উত্তরাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা আহত করেছে চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় জুটি ওমর সানী- মৌসুমীকে। তাইতো পর্দার নায়ক-নায়িকা বন্যা দুর্গতদের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে বন্যাদুর্গতের সহায়তায় অন্যান্য তারকাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ওমর সানী।

শুক্রবার বিকেলে ফেসবুক লাইভে ওমর সানী বলেন, এবার আমরা কোরবানি করবনা। কোরবানীর জন্য রাখা ১ লক্ষ টাকা এবার বন্যাদুর্গতের জন্য ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি আর মৌসুমী।

সানী বলেন, কোরবানি হল ত্যাগ। আল্লাহকে খুশি করার জন্য ত্যাগ স্বীকার করা। গত প্রায় ৩০ বছর ধরে আমি নিজের হাতে কোরবানি করি। এবারই করা হবে না। কোরবানীতে শুধু মাংস বিলালেই ত্যাগ স্বীকার হয় বলে আমি বিশ্বাস করি না।


সানী বন্যাদুর্গতের সহায়তার জন্য অন্যান্য তারকাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এজন্য তিনি একটি ফান্ড গঠন করারও তাগিদ দেন।আর এই উদ্যোগ নিয়ে কোন ধরনের রাজনীতি না করতেও তিনি সকলের প্রতি অনুরোধ করেন।